টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালকে ২১ রানে হারিয়ে সুপার এইটে খেলা নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ।
কিংসটাউনে এমন এক উইকেটে খেললো বাংলাদেশ এবং নেপাল যেখানে ব্যাট করা ছিল খুবই কঠিন কাজ।
এই উইকেটে প্রথমে ব্যাট করে ১০৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ, জবাবে নেপাল ৮৫ রানে অলআউট হয়ে যায়।
ওদিকে নেদারল্যান্ডস শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৩ রানে হেরে গিয়েছে, এর মানে বাংলাদেশ নেপালের বিপক্ষে হারলেও সুপার এইটে উঠতো।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ এ নেপাল, নেদারল্যান্ডস এবং শ্রীলঙ্কার যাত্রা আজ শেষ হলো। এই গ্রুপ থেকে সুপার এইটে বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা খেলবে।
সুপার এইট পর্বে বাংলাদেশে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং আফগানিস্তান।
বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী ২১শে জুন ভোরে এবং ২২শে জুন রাতে বাংলাদেশ যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি হবে ২৫শে জুন বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ছয়টায়।
বাংলাদেশ যেভাবে জয় পেল
মাত্র ১০৬ রান তুললেও বাংলাদেশের বোলিং-এর সময় মনে হয়নি নেপাল এই লক্ষ্য তাড়া করতে পারবে।
শুরু থেকেই উইকেটের সুবিধা নিয়ে আক্রমণাত্মক বোলিং করতে থাকে বাংলাদেশ।
নেপাল পাওয়ারপ্লের ছয় ওভারেই চার উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে পড়ে যায় সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সহযোগী দলটি।
এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেপাল জয়ের আশা জাগিয়েও এক রানে হেরে গিয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের কাছাকাছিও যেতে পারেনি।
মূলত বাংলাদেশের দুই পেস বোলারই নেপালকে এই ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে।
তানজিম সাকিব ও মুস্তাফিজুর রহমান কী করেছেন?
তানজিম সাকিব একদম প্রথম বল থেকেই ছিলেন আগ্রাসী এবং নিখুঁত।
একের পর এক বল করে তিনি ব্যাটারের সামনে গিয়ে কথার তুবড়ি ছোটাচ্ছিলেন, ১০৬ রানের পুঁজি নিয়ে তিনি ব্যাটারের সাথে খেলছিলেন মানসিক খেলা।
আর ব্যাটাররাও ‘ছোট সাকিবের’ এই ফাঁদে পা দিয়েছেন, রোহিত পাউডেল ও সান্দিপ জোরা আউট হয়েছেন একই ভঙ্গিতে, পয়েন্টে রিশাদ হোসেনের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে।
ভিডিও রিপ্লে দেখে মনে হচ্ছিল, তারা রিশাদকে ক্যাচ অনুশীলন করাচ্ছেন।
তানজিম সাকিবের প্রথম স্পেলেই তার চার ওভার একটানা শেষ করে দেয়া হয়, এই সময়েই নেপালের বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের আশাও একরকম শেষ হয়ে গিয়েছিল।
সপ্তম ওভারে যখন তানজিম সাকিব নিজের শেষ ওভার করলেন তখন নেপালের স্কোর ২৬ রানে পাঁচ উইকেট।
তানজিম সাকিব এই চার ওভারে রান দিয়েছেন সাতটি, উইকেট নিয়েছেন চারটি।
নেপালের টপ অর্ডারকে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়েছেন প্রায় একাই।
নিজের করা ২৪ বলের ২১ বলে কোনও রান দেননি তানজিম সাকিব, এটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ডট বলের রেকর্ড। দুটি ওভার করেছেন মেইডেন।
ম্যাচ শেষে তানজিম সাকিব বলেন, “আমরা কেবল চেষ্টা করেছি সব বিষয় সহজ রাখতে। ম্যাচের কোনও মুহূর্তেই আমরা ঘাবড়াইনি। আমরা সবসময় বিশ্বাস করেছি যে এই পুঁজিতেই ম্যাচ জিততে পারবো”।
এটা ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রান ডিফেন্ড করার রেকর্ড।
তানজিম সাকিবের ওভার শেষ হয়ে যাওয়ার পরে নেপালের কুশাল মাল্লা ও দিপেন্দ্র সিং এইরি ৫২ রানের একটি জুটি গড়েন।
কিন্তু রান রেটের চাপ সবসময়ই বাড়ছিল, ১৬তম ওভারে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বলে ১২ রান নিয়ে কিছুটা হালকা হওয়ার চেষ্টা করেছিল নেপালি ব্যাটাররা কিন্তু মুস্তাফিজ এসে আবারো উইকেট নেয়া শুরু করেন পরের ওভারেই।
নিজের করা শেষ ১২ বলে মুস্তাফিজ এক রান দিয়ে দুইটি উইকেট নেন, এখানেই ম্যাচ নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ।
মুস্তাফিজও চার ওভার বল করে তানজিম সাকিবের সমান সাত রান দিয়েছেন, ডট বল দিয়েছেন ২০টি।
এই দুজন মিলে মোট ৪১টি ডট বল দিয়ে নেপালের ব্যাটারদের পুরো ইনিংসেই চাপে রেখেছেন।
মুস্তাফিজের করা ১৯তম ওভারে দিপেন্দ্র সিং এইরি যেন বল ব্যাটে লাগাতেই পারছিলেন না।
ম্যাচ শেসে মুস্তাফিজুর রহমান নিজের ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) একাউন্টে লিখেছেন, “ঈদ মোবারক বাংলাদেশ”।
ম্যাচ শেষে নেপালের অধিনায়ক রোহিত পাউডেল বলেন, “আমরা বল ভালো করেছি, তবে ব্যাটার হিসেবে তেমন ভালো করতে পারিনি।
বাংলাদেশ আসলেই খুব ভালো বল করেছে, পাওয়ারপ্লেতে চার-পাঁচ উইকেট হারানোর পর আসলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি”।
ব্যাটারদের ব্যর্থতা চলছেই
ম্যাচের শুরুতেই তানজিদ হাসান তামিমের অবিবেচক শটে উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত পাঁচ বলে চার রান করে আউট হয়ে যান।
গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচে শান্ত মোট ২৬ রান করেছেন, সাতেরও কম গড়ে।
বাংলাদেশ নেপালের বিপক্ষে ৩০ রানে ৪ উইকেট উইকেট হারিয়েছে।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫০ রানে চার উইকেট হারিয়েছিল।
শ্রীলঙ্কা এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও দলীয় স্কোর ১০০ ছোঁয়ার আগেই বাংলাদেশের টপ অর্ডার প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছে।
যদিও এমন ব্যাটিং-এর পেছনে উইকেটের দায় আছে, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটারদের শট সিলেকশনও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
যেমন নেপালের বিপক্ষে তানজিদ তামিম প্রথম বলেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নাজমুল হোসেন শান্ত রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে আউট হয়েছে।
আবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাকিব আল হাসান বাউন্স বলের লাইনে না এসেই বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন।
লিটন দাশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৬ রান তোলার পর আর ১০ রানের বেশি করতে পারেননি কোনও ম্যাচে।
ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাটিং ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন, তিনি প্রেস কনফারেন্সে বলেন, “ব্যাটাররা আসলে একেবারেই ভালো করতে পারেননি। আমরা সুপার এইটে উঠেছি এটার ক্রেডিট বোলারদের”।
“বোলাররা প্রতিদিন ম্যাচ জিতবে এটা প্রতিদিন সম্ভব না, এই উইকেটে ১৩০-১৪০ রান করা সম্ভব ছিল সেটা আমরা পারিনি। এই টুর্নামেন্টে তেমন রান আসছে না, তবে চেষ্টা করলে আরও ভালো ব্যাট করতে পারবো”।
নাজমুল হোসেন শান্তর মতে ব্যাটিং দুশ্চিন্তার কারণ, “এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পরের রাউন্ডে যত কম ভুল করা যায় সেটাই মাথায় রাখবো”।
নেপাল যে ধরনের ক্রিকেট খেলেছে শান্ত বলেছেন এটা ক্রিকেটের জন্যই ভালো, “আশা করি পরের বিশ্বকাপে নেপাল আরও দুর্দান্তভাবে ফিরে আসবে”।
সুপার এইট সম্পর্কে শান্ত বলেন, “এখন কোনও বড় দল বা বড় নাম নয়, আমরা সুপার এইটে অন্য দলের মতোই ম্যাচ জিততে যাবো।”